জন্মদিন

আরো একটি বছর পেরোয়, কালের নিয়ম মেনে
আরো একটি রাত পোহালো, জীবন মূল্য জেনে
সময় আবার ফিরে দেখা’র, কি রাখবো মনে
কোনটা ভুলে যাওয়াই শ্রেয়, ভাবুক প্রিয়জনে

গত বছর কেমন গেলো, প্রাপ্তি হলো কত
অগ্রগতির মাপ বুঝতে, হলাম চিন্তারত
হিসাব করা’র আলতো প্রয়াস, বন্ধু পেলাম কটা
কোন বন্ধু করলো আঘাত, ফিরিয়ে দিলাম কটা

এমন জটিল চিন্তা ছেড়ে, তাকাই বরং আগে
তিক্ত আবেশ মুছে ওজন চাপাই সুখের ভাগে
জীবনের এই তুলাদণ্ডে, দুঃখ হালকা থাক
সুখের পাল্লা, থাক না ভারী, দুঃখ তফাৎ যাক

জন্মদিনের শুভ লগ্নে, থাকুক সুখস্মৃতি
আগাম সুখের হাতছানি থাক, থাকুক অনুভূতি
ক্লেশের কোনো রেশ না থাকুক, এটাই আমার চাওয়া
ভালো থেকো, ভালো রেখো, হোক না সেটাই পাওয়া

ছন্দের খোঁজে

সকাল থেকেই ভাবছি বসে, কি লিখি, কি লিখি
মনের মধ্যে উথাল-পাথাল, কথার ঝিকিমিকি
কথা গুলো আপন ভোলা, বাক্যালাপই বন্ধ
সব কথাকে গুছিয়ে তুলে, আসবে কি আজ ছন্দ?

ছন্দের খোঁজে বাহির পানে, যখন ফেরাই দৃষ্টি
অণুস্তুপ ছন্দে যেন, হচ্ছে বারি বৃষ্টি
আনন্দগান গাইছে যেন, আকাশ বাতাস মিলে
তৎসহ দিচ্ছে যে তাল, পরিপূর্ণ ঝিলে

সিক্ত পথে, রিক্ত শিশু, সুখ যে তাহার নাই
মাথার উপর আচ্ছাদন, সে, উড়ে গেছে তাই
অগত্যা সে ভীরু পায়ে, খোঁজে এক আড়াল
প্রকৃতি’র এই ভালোবাসা, পোষায় না আজ কাল

সদ্যজাত কুকুরছানা, সেও কাতর, ভিজে
কুকুর মাতা আগলে রাখে, ছাদ হয়ে সে নিজে
উপলব্ধি হলো হঠাৎ, খুঁজে না পাই ছন্দ
টাপুর টুপুর হলো যেন, কলরব এক মন্দ

জীবন ছন্দ বড়ই জটিল, মস্ত বড় ধাঁধা
স্থান, কাল ও পাত্র বিশেষ, তারই সাথে বাঁধা
কারো মনে আলো’র ছন্দ, কারো মন আঁধার
ছন্দ খোঁজার কালেই ছন্দপতন যে আমার

স্বাধীনতা

আমি স্বাধীন, নিচ্ছি যে শ্বাস, বিনা অনুমতি
পরম পিতা দিলেন অঢেল,জীবন পেল গতি
আমি হাসি, মনের সুখে, কারো নির্দেশ বিনা
কান্না আমার, ঘরের কোণে, কেউ যে দেখে না

স্বাধীনতার সীমারেখা, হলো এতেই শেষ
তবুও দেখি জীবন খানা, যাচ্ছে কেটে বেশ
ছেলে বেলায় বিদ্যালয়ে, ঘুচলো স্বপ্ন দেখা
স্বাধীন চিন্তা নেই যে কোনো সিলেবাসে লেখা

ক্লাস ১০ এর দরজা থেকে, স্ট্রিম বাছার কালে
ভালো ছেলে হওয়ার বাতাস, বিজ্ঞানেরই পালে
সাহিত্যের কোমলতা পেল না তা’র প্রাপ্য
ডাক্তার কি ইঞ্জিনিয়ার, আর বাকি সব ব্রাত্য

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাশেষে উপার্জনের তাড়া
বাবা’র হোটেল অনেক হলো, নিজের পায়ে দাড়া!
সেই তাড়া তে ভুলতে হলো, নিজের মন কি চায়
স্বাধীনতা ভুলতে হবে, উপার্জনের দায়

স্বাধীন আমি, কামাই আমি, আমাকে কে পায়
ক খানা বোন আছে ছোট, দাদা’র থাকেই দায়
অতএব শখ আহ্ল্লাদে হলো যে কাট-ছাট
বাবা মা ও বোনেদেরই, থাকুক না ঠাট বাট

বাড়ি, তাও যে জরাজীর্ণ, সংস্কার দরকার
ফ্ল্যাট কেনা তা থাক না বাকি, দায় টা যে আমার
বাড়লো তলা, ঢাকলো ফাটল, মায়ের মুখে হাসি
স্বাধীনতার তুলনায় যে, সেটাই ভালবাসি

বাউন্ডুলে প্রকৃতি মোর, বিয়ে তে নেই মন
বিয়ের বাধন বড্ড জটিল, এড়ায় সর্বক্ষণ
আরো জটিল বাবা মাযের, চাপ এড়িয়ে যাওয়া
স্বাধীন জীবন মুক্তি পেল, টোপর মাথায় দেওয়া

গুরুজনে বললে ডেকে, সংসারে মন দাও
স্বাধীনচেতা হওয়ার স্বপ্ন, এবার ভুলে যাও
চাকরি এবং ঘরের চাপে, “স্বা” যে মেলে পাখা
“পরা” এসে বসলো উড়ে, হয়ে “ধীন” এর সখা

বাড়ছে বয়স, কাটছে জীবন, আছি নিরুদ্বিগ্ন
মাঝে মাঝে “স্বা” দেয় উকি, ঘটায় যত বিঘ্ন
আজও ভাবি, একলা বসে, আমি কি আমার?
জীবন টা কি বইছে সুখে, নেই কি দুখঃ তা’র

স্বাধীনতা ত্যাগ করা কি, হযেছে উচিত কাজ
স্বাধীন হতে পারলে কি আজ হতাম মহারাজ?
যখন দেখি সুখেই আছে, স্ত্রী, ও বাবা মা
পুত্র মুখের হাসিই মেটায়, দ্বিধা’র কালিমা

সাদা বনাম কালো

মগজ যন্ত্র বড়ই জটিল, প্যাঁচ এর যে শেষ নাই
লক্ষ তন্তু সামলানো, ত়া, কঠিন ব্যাপার তাই
কারোর মগজ চলছে তালে, সৌন্দর্য্যের খোজে
কারো মগজ আনন্দ পায়, কদর্য্যতার ভোজে

মগজ এবং হৃদয়, তাদের, লড়াই চিরন্তন
অধিকাংশই মগজ জেতে, জটিল যে হয় মন
হৃদয় সদাই কোমল প্রকার, শুধুই বাসে ভালো
জটিল মগজ, নিয়ে দখল, বাড়ায় মনের কালো

ঈর্ষ্যা, হিংসা, দ্বেষ, ও ঘৃনা, কালো মনের চিহ্ন
হৃদয় পেলে মনের দখল, দৃশ্য হবেই ভিন্ন
কালো’র প্রভাব সব রঙ্গে তেই, বড্ড শক্তিশালী
সাদা’র বহর, যায়না বোঝা, ছিটছে বেশি কালী

অন্তর্যামী মুচকি হাসেন, দেখে আপন সৃষ্টি
থাকেন বুঝি অপেক্ষাতে, মেলবে কখন দৃষ্টি
মুর্খ ওরে, দেখ না চেয়ে, সাদায় কত আলো
আধার প্রিয় হযে, কবে, কা’র হযেছে ভালো!

জাগুক হৃদয়, মগজ তন্তু, হোক না কিছু শান্ত
মন বাবাজি বুঝবে নিজেই, বিদ্বেষ বড় ভ্রান্ত
ভাল লাগা, ভালো বাসা, সাদা’র যে কারসাজি
থাক না কালো, পড়ে কোণে, যেমন থাকে পাজি

সুখ এবং সারমেয়

গতকাল ঠিক মাঝরাতে, ভেঙ্গে গেল ঘুম
বুকের মাঝে হচ্ছে শব্দ, দুম দ্রাদুম দুম
ধরফরিয়ে উঠি, ঘর্মাক্ত কলেবরে
বেশ তো ছিলাম, শান্ত জীবন, হলটা কি ওরে!

চারিদিকের অন্ধকার, দেখতে যে না পাই
হাত বাড়িয়ে সুইচ টা টিপি, বৃথা চেষ্টা টাই
মাথার উপর পাখা খানাও, আছে যে নিস্পন্দ
ফ্রিজ এর চেনা গুনগুনানি, সেটাও যেন বন্ধ

জানালা দিয়ে উকি মেরে, বাহির পানে দেখি
গুটি কয়েক সারমেয়, ঘুরছে ইতি উতি
তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, মহানন্দে ছোটে
“ভৌ-কারে” উপস্থিতি জানান দিয়ে ওঠে

ভাবি আমি, দিব্যি আছে, সারমেয়র দল
কারেন্ট যাওয়ার শোক পালন, করবি কি না বল!
আগামী কাল কি ছুটতে হবে, সকাল সকাল মিটিং
হবে দিতে ক্লায়েন্ট কুলে, অসহ্য সেই সিটিং?

কিংবা ভাবায় কেমন করে EMI টা হবে?
ক্রেডিট কার্ড এর বিল এসেছে গতকালই সবে!
ছেলের স্কুল এর admission , তাও সামনে আছে
বউ এর বায়না, উটি যাবে, সে উঠেছে গাছে

এত চিন্তা ভিড় করলে, বুক ধরফর হবে
আছিস তোরা খোশমেজাজে, হলো খাওয়া সবে
মানব পুত্র আশা করে, যদি কুকুর হত
সব কিছু সে বেবাক ভুলে, সুখের চূড়া ছুত

সূর্য্য রোষ

সূর্যদেবের প্রচন্ড রোষ, পুড়ছে যেন বঙ্গ
মানব ত্রাহি রব তুলেছে, কাঁদছে তাহার সঙ্গ
তৃণ মূল উত্পাটিত, বোঝো এবার ঠ্যালা
সবুজহীনা রুক্ষ ভূমি, কাঁদছে যে এই বেলা

অনন্ত তাপ আছড়ে পড়ে, যেন শক্তিশেল
তার ই মাঝে ভোট বাবুরা, দেখান তাদের খেল
পাড়ায় পাড়ায় মিটিং মিছিল, সুয্যি মাথায় নিয়ে
গালাগালি হুঙ্কার সব, যাচ্ছে তারা দিয়ে

ভিড় এর মাপ টা দেখে সবাই এই ভাবতেই ব্যস্ত
জোট সরকার হচ্ছে নাকি? ঘাস ফুল কি অস্ত?
নাকি ওস্তাদ খেল দেখাবে, মারবে যে শেষ রাতে
খেল সফল, আগামী ৫, কাটবে যে দুধ ভাতে

মে’র উনিশ, তাকিয়ে সবাই, কি হয় যে সেইদিন
লাল সবুজ না নীল্ সাদা, বাজবে কাহার বীন
বীন বাজবে, সুর-বেসুরে, সুয্যি’র তাতে কি?
তার রাগেতে পড়ছে যেন, বালতি বালতি ঘি

অতএব, বাঁচার তরে, আকাশ পানে চাই
যদি কিছু জলভরা, মেঘের দেখা পাই
গহন মেঘের ছায়া বড়, প্রিয় মনে হয়
ঢেকে সুয্যি, দেখাও প্রতাপ, বাজুক তোমার লয়

সুস্বাগতম

This was written to welcome a dear friend into our Whatsapp group of Schoolmates.

সুস্বাগত বন্ধু ওরে, মোদের সভা মাঝে
হৃদয় ভরা খুশির জোয়ার, এলো যে এই সাঝে
আনন্দএর এ নিকেতনে, হল পদার্পণ
ভুলে যাওয়া দিনের স্মৃতি, সবই যে আপন

বিশ্বের সব প্রান্তে মোরা, রই ছড়িয়ে বেশ
হেথায় খুঁটি বাধা মোদের , সবার উপর দেশ
সেই দেশেরই এক কোণাতে, ছিল মোদের স্কুল
স্কুল এর বাঁধন পোক্ত, তাকে ছিড়তে যাওয়া ভুল

সেই বাঁধন এর টানেই হলাম, একত্র আবার
ছেলেবেলা ফিরে পেলাম, আনন্দ সবার
আয় না, বাঁধন ধরে রাখি, চেষ্টা তে আপ্রাণ
এই সুখেতে হোক না রে সব দুঃখের অবসান

শনি-রবি

সপ্তাহের সেই পাঁচ খানা দিন, পেরিয়ে আসি উড়ে
শনি রবি’র অমোঘ টানে, ক্লান্তি যায় যে দুরে
সকাল বেলা’র অল্প আয়েস, বালিশ আঁকড়ে থাকা
গত রাতের অলীক স্বপ্ন, আবার করে দেখা

ঘড়ি টা আজ, হলো ব্রাত্য, ঘুরুক আপন মনে
অ্যালার্ম টাকে করছি বোবা, জ্বালায় জনে জনে
প্রকৃতি আজ চুক্তি বদ্ধ, ডাকবে করে দেরী
মাথার চুল ও উস্কো খুসখ, বাগাবো না টেরি

ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ মিশিয়ে, ব্রাঞ্চ কে গ্রহণ করি
ভাত ঘুম এর আয়েশ টা কে জড়িয়ে বুকে ধরি
Whatsapp এর টিং টং টা, ঢালে যেন মধু
বিশাল বিশ্ব হাতের মুঠোয়, প্রযুক্তির এ জাদু

সারা টা দিন, মন টা থাকে ফোন এর দিকে চেয়ে
কখন আসবে পরের মেসেজ, ভালোলাগা নিয়ে
তত্সহ বইবে স্রোতে, গানের সাথে ছড়া
থাকবে শেয়ার, “চুটকি পাহাড়”, হাসির রাশি ভরা

অবশেষে চোখ টা যাবে ঘর এর বাহির পানে
সুয্যি মামা অস্ত গেছেন, কখন কে বা জানে
পরিত্যক্ত ঘড়ির দিকে, যাচ্ছে এখন চোখ
বলছে যে মন, চলছে চলুক, আরো কিছু হোক

মন তো বাবু, শরীর কাবু, নিদ্রা দেবী ডাকে
বেজার মুখে উঠে পড়ি, “Bye ” জানাবার ফাকে
ঘুম যাত্রা করব শুরু, জাগব যে ওপারে
আরেকটি দিন থাকবে বসে, নিয়ে অজানারে