মদনা’র স্বপ্ন ভঙ্গ

মাজাভাঙ্গা গ্রাম এর ছেলে মদন মোহন পাল
মদনা নামেই চেনে সবাই, গ্রামের সে দিকপাল
শান্ত শিষ্ট ভালো বলেই গ্রামে তার নাম ডাক
মাধ্যমিকে পাশ দিয়ে সে শিক্ষিত অবাক

ভাগচাষী বাবা যে তার, সংসার টা ঠেলে
উপার্জন অতি অল্প, ক্ষিদেয় উদর জ্বলে
মদনা আবার জ্যেষ্ট ভ্রাতা, ছোট দুটো ভাই
বোন আছে তিন, সংসারেতে সখ আহ্ল্লাদ নাই

চাষ বাসে তার নেই যে ইচ্ছে, চায় সে হতে বাবু
ঘাড় গুজে সে করতে যে চায়, বই খাতা কে কাবু
নিদেন পক্ষ্যে গ্রামের স্কুলে, পেতো যদি কাজ
জীবন টা তার কাটত সুখে, হতো মহারাজ

একদিন সে হঠাৎ করে, শুরু মাপামাপি
গ্রামটা নাকি হবেই শহর, খুলবে লক্ষী ঝাপি
প্রযুক্তিবিদ বাবু সে এক, কেনেন জমি হেথা
গড়বেন সে মস্ত বড়, আপিস পাড়া সেথা

গ্রামের মানুষ আনন্দেতে, দিল ছেড়ে জমি
সিন্ডিকেট এর দাপট শুরু, যেন তাদের ভূমি
মদনা ভাবে, এই তো সুযোগ, সিন্ডিকেট কে ধরে
ব্যবস্থা এক করতে হবেই, আপিস পাড়ার দোরে

ছিড়ল শিকে ভাগ্যে যে তার, ধরল সে এক দাদা
মায়ের কিছু গয়না বেচে, পড়ল জামা সাদা
চাকরি পেল এক আপিসে, পিয়ন-গিরি কাজ
চাষেই যত লাজ লজ্জা, এতে যে নেই লাজ!

সাইকেল টা হাঁকিয়ে বাবু, চলেন অফিস পানে
মন এর ফুর্তি লাগামছাড়া, বাঁধ কোনো না মানে
ঠান্ডা ঘরে ঘোরাঘুরি, ফায়ফর্মাস খাটা
মাঝে মধ্যে বিড়ি ফোঁকা, গ্রাম কে জানায় টাটা

আপিসের সব দাদা দিদি, আসে ট্রেনে বাসে
স্টেশন মুখে থাকে যে বাস, অফিস এরই খাস এ
বাজলে ৯ টা, কলকলিয়ে ওঠে অফিস পাড়া
লিফট গুলো তে জায়গা যে নাই, সবার বড় তাড়া

ফিট ফাট সব দাদা দিদি, ঝকঝকে বেশ বাস
সুগন্ধি সব আতর মেখে, নিচ্ছে সবাই শ্বাস
কম্পিউটার মুখে করে, বসে যে সব কাজে
এই অফিস এ থাকা বুঝি, এদের এ সব সাজে

মদনা ভাবে মাইনা পেলে, কিনবে কিছু জামা
এদের মাঝে, ত়া না হলে, ঘসবে মুখে ঝামা
কিনবে একটা জুতোও সে, চকচকে আর খাসা
যাতে তাহার পা টা দেখে, কেউ না বলে চাষা

বেশ কদিন পেরিয়ে যেতে এলো যে সুন্দরী
সোনার বরণ অপূর্ব সে, যেন স্বর্গের হুরী
অফিস সুদ্ধ মানুষ তাতে মুগ্ধ হতবাক
মদনার বোবা চোখে লাগলো যেন তাক

সুন্দরী সে ভেসে বেড়ায়, গোটা অফিস ময়
মদনা শুধুই দৃষ্টি মেলে, ওদিক চেয়ে রয়
কখন তাহার সময় হবে, ফেরাবে সে চোখ
নযনবানে বিদ্ধ হবে, যা হবে ত়া হোক

প্রথম প্রথম গ্রাম্য মদনা রইলো উপেক্ষিত
দেখা সোনা রইলো শুধুই চায়ের কাপে স্থিত
মদনা শুধুই সুযোগ খোজে, কেমন করে হায়
আরো একটু বেশি সময়, পাশে থাকা যায়

সুযোগ এলো অকস্মাৎ, যখন হুরী ভিত
শরীরটা তার জুৎ ঠেকে না, নাসা হলো স্ফিত
চাপা গলায় ডাক, ত়া শুনে, মদনা গেল ছুটে
মনের মধ্যে কোকিল ডাকে, আবেগ উঠছে ফুটে

চুপি সারে হাতের মাঝে, দিল টাকা গুজে
“আনবি রে ভাই একটা পুরিয়া যেখান থেকে খুঁজে”?
দেবী’র আদেশ শিরোধার্য, উড়ল “মদন যান”
সিন্ডিকেট এর দাদা বাবু, সব মুস্কিল আসান

পুরিয়া নিয়ে মদনা যখন, ফিরলো অফিস পাড়া
গেট এর সামনে দাড়িয়ে দিদি, তাহার বড্ড তাড়া
ছো মেরে সে পুরিয়া কেড়ে, দিল পগার পার
অবাক চোখে মদনা ভাবে, “কি হলো আবার”?

বিকেল বেলা সিড়ির তলে, জড়িয়ে ধরেন তিনি
বলেন “মদনা, তোর কাছে তে থাকব সদাই ঋণী”
“এই কথা যেন কেউ না জানে”, হলো তাদের চুক্তি
মদনা ভাসে সুখের ভেলায়, এতেই যে ত়া’র মুক্তি

বেশ কিছু দিন, মাস ও গেল, ঋণ এর চুক্তি চালু
এক বিকেলে হঠাৎ এলেন, বেশ টা আলু থালু
“ওই ছেলেটা ড্রাগ peddler “, আঙ্গুল তাহার পানে
সাথের পুলিশ, খপাত করে তাহার কলার টানে

ঋণ শোধের রকম দেখে মদনা হতবাক
আঁধার দেখে গ্রাম এর ছেলে, রুদ্ধ হলো বাক
সবার সামনে কোমড়ে দড়ি, হাতে যে হাতকড়া
মদনা বুঝতে নারে যে সে বাঁচা না সে মরা

মাজাভাঙ্গা গ্রামের মানুষ থানায় হলো জড়ো
“মদনা মোদের ভালো ছেলে, ওকে কেন ধরো”!
মা জননী করেন যোগাড়, গয়না অবশিষ্ট
মেয়ের বিয়ে পড়ে হবে, ছেলে না থাক ক্লিষ্ট

মাজাভাঙ্গা গ্রামের ছেলে মদন মোহন পাল
বাবা’র সাথে, কাজ এর খোঁজে, যাবে শহর কাল
চাষ এর জমি কিছুই যে নেই, অফিস সবই খেলো
বিশ্বাস আর সরলতা, সেটাও চলে গেল

Published by Shantanu Chakraborty

I am a "Free-Willy", who loves to love anything that is lovable, be it people, nature, Music, Movies, Sports..... Basically, anything under the sun. In recent times, writing bug bit me hard, which is why I decided to take my expressions to broader community! Requesting all to patronize this journey and provide your uninhibited feedback to make it interesting. Let's all get on this boat together.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

%d